মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আজ ১৬ জুলাই রোববার থেকে সারাদেশে সব এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় তালাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। তবে বিটিএর সাথে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্ত নয়, অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিটিএ সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, আমরা জাতীয়করণের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করছি। যারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবে। জাতীয়করণ হলে সে সুবিধা সবাই পাবে, আমরা একা পাবো না।

বিটিএ সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা তালাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এটি মানছেন না বলে শুনেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও অনেকে বিরোধিতা করেছিল কিন্তু পরে স্বাধীনতার উপকারিতা ঠিকই ভোগ করছে।

এর আগে গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ রাখার ঘোষণা দেন বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া।

জানা গেছে, গত ১১ জুলাই থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। আজ চতুর্থ দিন শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে গতকাল বিকাল ৫টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে আজ সকাল থেকে সারাদেশের সব শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকায় আসবেন বলে পূর্বে ঘোষণা করা হয়।

শিক্ষকদের দাবি, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এক হাজার হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।

এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের এক ধাপ নিচে দেওয়া হয়। তাছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল না দেওয়ার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।

শিক্ষকরা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের সুবিধা না দিয়েই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক।

বিটিএ সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, আমাদের এক দফা দাবি, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবো। আমরা পুলিশের সাথে কথা বলেছি। তাদের অবগত করেছি কর্মসূচির বিষয়ে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।

বিটিএ সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা ১১ জুলাই থেকে এখানে অবস্থান করেছি। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে চাই। দাবি আদায় হলে এক সেকেন্ডও দেরি করবো না আমরা। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরবো না।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আগে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।